1. rasel1391992@gmail.com : Rasel Ahmed : Rasel Ahmed
  2. wadminw@wordpress.com : wadminw : wadminw
May 20, 2024, 5:44 am

বৃত্ত ভাঙার স্বপ্নঃ আমার কিছু কথা 

Reporter Name
  • Update Time : Friday, March 3, 2023
  • 530 Time View

 তাইজুল ফয়েজ:-

পড়ছিলাম ধর্ম-মানবতার জন্য নিবেদিত শিক্ষাজন, কবি, কথাসাহিত্যিক, সংগঠক ও সমাজসেবক আহমদ আল কবির চৌধুরীর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বৃত্ত ভাঙার স্বপ্ন ‘ কী দুর্দান্ত নাম ! সাহসী উচ্চারণ!! 

কবি আহমদ আল কবির চৌধুরী আমার বন্ধু- সহপাঠী। সিলেট ইসলামি সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। এক নিবেদিতপ্রাণ বন্ধুবৎসল মানবিক মানুষ। সুসময়-দুঃসময়; যে অবস্থাই হোক, মানিয়ে চলতে জানে। দুরন্ত সাহসী। সবসময় স্রোতের বিপরীতে শিরদাঁড়া উঁচু করে চলা 
এক ব্যাক্তিত্ববান যুবক। ছাত্র অবস্থায় থাকতেও দেখেছি সত্যকে সত্য, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে তাঁর মতো আর কেউ পারেনি। যেকোনো অনিয়ম উশৃংখলতায় তাঁর জবান সবার আগে খুলতো। সবার আগে প্রতিবাদ করতো। কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পেতো না। 

আমাদের সহপাঠীরা সবসময় তাকে নির্ভরতার প্রতীক ভাবতাম। যেকোনো কিছু অকপটে শেয়ার করতাম। সে তাঁর সর্বোচ্চ দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতো। যেকোনো আপদে-বিপদে সে আগে থাকতো। কবিতা লেখে প্রতিবাদ করতো। সেই সময় থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।

আহমদ আল কবির চৌধুরীর সাথে আমার সম্পর্ক ২০০২ সালের কোনো এক আলোকিত সন্ধ্যায়। বাংলাদেশের পূর্ব সিমান্ত ফুলতলী ছাহেব বাড়ীতে।

সে আমাকে লেখালেখিতে উৎসাহিত করে এবং সিদ্ধান্ত নিই একটা ম্যাগাজিন করবো। “সানরাইজ” নামে এক রাতেই একটা ম্যাগাজিন করি। এর পুরো কৃতিত্ব আমার বন্ধু আহমদ আল কবির চৌধুরীর। যা ছিল অন্য যেকারো জন্য অসম্ভব। পরের দিন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক মাসিক পরওয়ানার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মাও. হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী। সেই থেকে আজ অবধি আমাদের সম্পর্ক অটুট। “সানরাইজ “নাম পরিবর্তন করে পরবর্তীতে” নকশী বাংলা” নামেই আজও পর্যন্ত প্রকাশিত হয় আসছে।
বলছিলাম, বৃত্ত ভাঙার স্বপ্নের কথা। আহমদ আল কবির চৌধুরী সত্যিই বৃত্ত ভাঙার লোক। এটা আমি নয় তাঁর শত্রুও বিশ্বাস করে। করতে বাধ্য। এ কাব্যগ্রন্থটি তার লেখা সপ্তম বই। এতে তুলে ধরা হয়েছে সমাজের অসংগতির কথা। চাপা বেদনার কথা। মানুষের অধিকারের কথা। দুষ্ট চক্রের বৃত্ত ভাঙার কথা। ভাষার কথা। বঙ্গবন্ধুর কথা। স্বাধীনতার কথা। মুখোশধারীর মুখোশ উন্মোচনের কথা। 

৪৮টি ছড়া কবিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি। কবি মানুষকে সবার উপরে স্থান দিতে গিয়ে তাঁর ভালোবাসি মানুষ কবিতায় স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন, “মানুষের কাছে আমি 

হেম খুঁজি হেম

মানুষের মাঝে আছে 

অসীমের প্রেম। ” 

মরণ নদী কবিতায় কবি নিজের দুঃখের কথা বলে সমাজের সকল মানুষ যে স্বপ্নজালে বন্দী একথাটি খুব অল্প কথায় চিহ্নিত করে উচ্চারণ করেছেন, 

“মরণ সাঁকোর পরে হেঁটে 

স্বপ্ন দেখি কতো

স্বপ্নজালে বন্দী আমার 

দুঃখ শতো শতো। “

অন্য কবিতায় বন্ধুর সজ্ঞা দিতে গিয়ে কী চমৎকার বলেছেন, 

“বন্ধু বানাও তাঁকে, মান অভিমান যার আছে 

ভুল ধরবে সামনে থেকে ভাসবে ভালো পাছে। “

সমাজে এখন দম্ভের প্রতিযোগিতা চলছে। একথাই তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে, 

“হিসেব খাতা পূণ্যে ভরা 

হিংসে ভরা মন 

পূণ্য কাজে মন ঠেকে না 

দম্ভে কাটে ক্ষণ।”

নিজে যতই বিত্তশালী হোন মানুষের উপকারে না আসলে সে অর্থবিত্ত ব্যর্থ ! মনে সুখ থাকে না। আত্মা কলুষিত হয়। অন্তর মরে যায়। ঘুম ছুটে যায়।

একথাই তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে, 

“সবার সুখে সুখ খুঁজে নাও/মনটা করো বড়, 

পরের জন্য কাঁদতে শেখো / দুখীর তরে লড়ো।

একার সুখে সুখ থাকে না / ঘুম থাকে না চোখে, 

টাকার পাহাড় যতই গড়ো/ পাষাণ বলে লোকে।”

করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশ যখন নাকাল প্রায়। অনাহার অর্ধাহারে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক তখন মরার উপর খরার গা এর মতো লকডাউন নামক স্ট্রিম রোলার চালিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা যখন বিকল প্রায় তখন ইদ আসলে কবির খেদোক্তি, 

“লক ডাউনে পেট ভরেছে 

পিট ভরেছে চাপে

করোনা এখন বিশ্বব্যাপী

আমরা সবার চাপে।

শোকাহত এই ধরনী

শাওয়াল হেলাল এসো না

বাঁকা চোখে এদিক চেয়ে 

মুচকি হাসি হেসো না। “

সমাজ আজ পঁচে গেছে। কোনটা মুখ আর কোনটা মুখোশ চেনা বড় কষ্টকর। তাইতো কবি বলেছেন, 

আলো দিয়ে ভরিয়ে তুলো

মনের যত ক্ষুদ্রতা 

চেনার মতো বুদ্ধি দিও

মেকি সকল ভদ্রতা। “

কবি আহমদ আল কবির চৌধুরী মনে করেন মুজিব মানেই দেশ। বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে তিনি সর্বদাই আপোষহীন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর অসংখ্য অগণিত কবিতা ও গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ আছে। এই বইয়েও দুইটি কবিতা আছে। এক ছত্রে তিনি লিখেছেন, 

“শিশুর তিনি বন্ধু ছিলেন 

কৃষক শ্রেণীর মিত্র ছিলেন 

ভয় ছিলো না লেশ 

মুজিব মানেই দেশ। “

মিনিস্টার কবিতায় বর্তমান সমাজের পরিপূর্ণ রূপ ফোটে উঠেছে,  

“সবার বেলা জজ যে তিনি 

নিজের বেলা ব্যারিস্টার,

মিথ্যা দিয়ে সত্য ঢাকেন

আজব মানুষ মিনিস্টার। 

হাটে-ঘাটে-মাঠে এখন 

মিনিস্টারের অভাব নাই! 

দূর্বলেরে করতে আঘাত 

মওকা শুধু খুঁজেন ভাই। 

লিচু কবিতায় আমাদের সরকারি চাকুরীজীবিদের সঠিক চিত্র এভাবে তুলে ধরেছেন, 

“সরকারিদের দায়সারা ভাব /ধার ধারে না কিছু 

চিহ্ন রাখা চায় না তারা/ চাই যে তাদের লিচু। “

ধর্মান্তরিত গোস্টিকে অতি সংক্ষেপে জালেম কবিতায় বলেছেন, 

“অত্যাচারীর ধর্ম কিসের? 

ধর্ম কিসের হিংসুকের?

জালেম তারা পশুর মতো 

রক্ত চুষে মজলুমের। “

আম জনতা কবিতার একাংশে বলেছেন, 

“বেদীর পরে ফুল দেবো কী? নেই যে পেঠে ভাত

কাজের চাপে বসের হাঁকে নির্ঘুম কাটে রাত। 

এমন স্বাধীনতা দিয়ে করবো আমি কি? 

উপোস থাকবে আমজনতা নেতা খাবে ঘি! 

দ্রোহ ও মনবতার কবি একজন সরস প্রেমিকও। স্পর্শ পাওয়া খাম কবিতা তার জলন্ত উদাহরণ। সেখানে বলেছেন, 

“তোমার জন্য সকাল দুপুর /এবং রাত্রি বেলা 

একুশ বছর চোখের জলে / ভিজছে অবহেলা! 

চিবুক ভিজুক রক্ত ঝরুক/ ঝরুক যতো ঘাম 

আমি তবু চাইবো তোমার / স্পর্শ পাওয়া খাম! “

পরীর ঠোঁট কবিতায় মেকি সমাজপতিদের একহাত নিয়েছেন এভাবে, 

“আমরা না হয় শরীর বেচি/ রাতকে করে ভোর 

তোমরা কেমন সমাজপতি/ আঁধার রাতের চোর।”

শেখ মুজিবুর রহমান কবিতায় দেশের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, 

“যেখানে আনন্দধারা, মানুষেরা স্বাধীন মুক্ত বহমান 

সেই দেশ বাংলাদেশ, নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। “

পথে নামো কবিতায় কী প্রেরণা মূলক মুক্তাঝরা কথা সাজিয়েছেন, 

“ঘোমটা খোলো, পথে নামো/ পথের কাঁটা সরাও

কেউ কারো নয় ধরার পরে /কাজের সাথে জড়াও।”

মুজিব কোট কবিতায় হুংকার দিয়েছেন কাদের? একটু শুনুন, 

“হাজার হাজার কোটি ডলার /করছে যারা লোট 

তাদের পাছা শক্ত ভীষণ /পরে মুজিব কোট। 

মুজিব কোটের কী মহিমা /সবকিছু তাই হালাল 

মুজিববাদে বিশ্বাসী নয় /দালাল এরা দালাল। “

ভাষাযোদ্ধা কবিতার একাংশে বলেছেন, 

“ভাষার যুদ্ধে শহীদ যাঁরা/ তারাও ভাতা পাক

এই দাবীতে ঐক্যসুরে /দাও উঁচিয়ে হাক। “

মুক্তিযোদ্ধা, ভাষার যোদ্ধা /কার অবদান কম? 

সবারইতো শত্রু একই /পাকিস্তানি যম! “

নতুন পথ কবিতায় বলেছেন, 

“আসুক যতো বাঁধার পাহাড় /ধৈর্য ধরে থাকো সৎ

ননীর পুতুল আর কতোকাল/সৃষ্টি করো নতুন পথ।”

ছাতা কবিতায় পৃথিবীর সব বাবাদের নিয়ে সন্তানদের উদ্যেশ্যে বলেছেন,

“ছাতা খুঁজো? খুঁজবে তুমি কতো? 

বাবার মতো দামী ছাতা হয় না তো! 

ছায়া খুঁজো? খুঁজে দেখো পাও কি,

বাবার মতো শীতল ছায়া হয় না কি? “

বর্তমানের মেকি বন্ধুদের পরিচয় খুব সুন্দর করে তার বন্ধু কবিতায় তুলে ধরেছেন, এভাবে —-

“আমার সুখে বেজার তুমি /দুঃখে খুঁজো সুখ

তুমি আমার বন্ধু সুজন /চাঁদের মতো মুখ। 

আমায় তুমি ভালোবাসো /নিজের থেকে বেশি 

আমার কোনো গিণ বেরুলে / করো রেশা-রেশি। 

গুণ ঢাকিয়া দোষ খুঁজো সব / বন্ধু তুমি তাই 

তোমার কথা ভাবলে আমার /ঘুমের চিন্তা নাই। “

কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন, অদ্ভুত আঁধার এসেছে পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি দ্যাখে তারা 

..

পৃথিবী অচল আজ তাদের পরামর্শ ছাড়া….…..!

কী অদ্ভুত! কী নির্মম সত্য! কবি আহমদ আল কবির চৌধুরীও তাঁর গরম কবিতায় সেই চরম সত্য উচ্চারণ করেছেন এভাবে, 

“কাপের চেয়ে পিরিচ গরম /গরম দেখায় চামচায় 

আজকে দেখি দুষ্ট লোকে /সবকিছুতে খামছায়। 

প্রশাসনকে উদ্যেশ্য করে উচ্চারিত হয়েছে, 

“সবাই এখন চামচামিতে /কে কারে দেয় উম 

স্বাধীন দেশে আজকে কেন /দিন দুপুরে গুম? 

প্রশাসনকে কে দিয়েছে / বাড়তি এতো ঘুম 

মন্ত্রী মশাই দেনতো বলে /কে করেছে গুম? 

গুমের জন্য, ঘুমের জন্য /কে দেয় এতো বেতন 

এই কী তবে বঙ্গদেশে /স্বাধীনতার চেতন? “

আরেকটি ছড়ার অংশ বিশেষ এরকম, 

“তুমি জানো তুমি ভুল /তবু ভুল খুঁজো 

আমারে হারাতে রোজ /কতো জন পুঁজো।”

আমাদের মানবিক কবি বন্ধু শত দুঃখ যাতনার পরও আশা ছাড়তে নারাজ। প্রবল বিশ্বাসে গেয়ে উঠেন, 

“আজ তোমাকে গাল দিলো যে 

কাল দেবে সে ফুল 

ভালো কাজে লেগে থাকো 

খুঁজবে নাকো ভুল। 

ইর্ষানলে জ্বলছে জ্বলুক 

তবু্ও বাসো ভালো 

পরোপকারে লেগে থাকো 

মন করো না কালো। “

বৃত্ত ভাঙার স্বপ্ন কবিতার শেষ স্তবক এরকম, 

“মানুষ এখন সবই বুঝে /মুখ যদিও খুলছে না 

সময় মতো হিসেব দেবে /বাঁদুর ঝোলা ঝুলছে না!”

বইটি প্রকাশ করছে সাউন্ড বাংলা প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন মম চৌধুরী। পরিবেশক, স্বপ্নালোক। 

বিদেশ পরিবেশক, 

নিউইয়র্ক, মুক্তধারা, ৩৭-৬৯,৭৪ স্ট্রীট, জেকসন হাইটস, নিউইয়র্ক ১১৩৭২

বিশ্ববঙ্গীয় প্রকাশন, বি-৯ কলেজ স্ট্টীট, কলকাতা -৭

সঙ্গীতা লিমিটেড ২২ ব্রিকলেন,লন্ডন। 

অনলাইন পরিবেশক, 

WWW.rokomari.com/sound bangle 

বইটি ২জন মহীয়সী নারী লেখককে উৎসর্গ করা হয়েছে। একজন প্রখ্যাত কবি ও কথাসাহিত্যিক আয়েশা আহমেদ অন্যজন উপন্যাসিক শিরিন আক্তার। মূল্য -২২০। দাম একটু বেশি ঠেকাচ্ছ। বইয়ের মান যেমন হওয়ার কথা তেমন হয়নি। হয়তো তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে প্রকাশকের খেয়ালের ভুলে এমনটি হয়েছে। আমরা বইটি উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। বইটি বাংলাভাষাবাসি সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক। এই শুভ কামনা। 
লেখক :তাইজুল ফয়েজ, সভাপতি, ইউরো বাংলা প্রেসক্লাব, কেন্দ্রীয় কমিটি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category