1. rasel1391992@gmail.com : Rasel Ahmed : Rasel Ahmed
  2. wadminw@wordpress.com : wadminw : wadminw
June 10, 2025, 4:52 am

ফ্রান্সে শিল্পী তুফান চাকমার “পাহাড়ের ঘুমপাড়ানির গান” শীর্ষক একক চিত্রপ্রদর্শনী

ডেস্ক রিপোর্ট
  • Update Time : Monday, June 9, 2025
  • 39 Time View

ফ্রান্সে শিল্পী তুফান চাকমার “পাহাড়ের ঘুমপাড়ানির গান” শীর্ষক একক চিত্রপ্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা

“পাহাড়ের ঘুমপাড়ানির গান” (Lullabies of the Hill) নামক এই লোকজ থিম নিয়ে গ্রাম বৈচিত্র্য পরিপূর্ণতায় ভরা শহর মোরেট-লোইং-এট-অরভান (Moret-Loing-et-Orvanne) -এ তুফান চাকমার প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্যারিস শহরের কোল ঘেঁষে, মধ্যযুগীয় স্থাপত্য ও ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পী আলফ্রেড সিসলির চিত্রকর্মে অনুপ্রাণিত এক মনোরম শহর মোরেট-লোইং-এট-অরভান। শহরটির বুক চিরে প্রবাহিত লোয়াং নদী ও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন জীবন্ত এক শিল্পকর্ম। এই সৌন্দর্য ঘেরা পরিবেশেই ৭ ও ৮ জুন ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক হৃদয়ছোঁয়া সাংস্কৃতিক উৎসব। স্বনামধন্য জুম্ম শিল্পী বাংলাদেশের গর্ব তুফান চাকমা-র প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী “Lullabies of the Hill”। আয়োজনে ছিল সুপরিচিত মানবাধিকার সংগঠন “জুম্মদের কন্ঠস্বর” (La Voix des Jummas -LVJ), স্থান ছিল লোয়াং নদীর তীরবর্তী Salle Roland Dagnaud কমিউনিটি সেন্টার।

দুই দিনের এই অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলের শ্রদ্ধেয় রানী ইয়ান ইয়ান, যিনি এই মনোজ্ঞ উৎসবকে আরও মহিমান্বিত করেন।

৭ জুন শনিবার প্রদর্শনীর উদ্বোধনীর দিন প্রথমেই রানী ইয়ান ইয়ান সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শহরের মেয়রের সঙ্গে। মোরে শহরের সম্মানিত মেয়র ডিক্রান জাকেওসিয়ান এর আমন্ত্রণে রানী ইয়ান ইয়ান, ‘জুম্মদের কন্ঠস্বর’ এর সভাপতি রেমি ফ্লেগিয়ের ও সহ-সভাপতি মেকসুয়েল চাকমা সহ মোট সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মেয়রের কার্যালয়ে উপস্থিত হন। সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান বাস্তবতা, জুম্ম আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক সংগ্রাম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা হয়।

মেয়র জুম্ম জনগণের প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেন ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের আগ্রহ জানান। এছাড়াও রানী ইয়ান ইয়ানকে একজন স্থানীয় গাইড ও ভূগোলবিদ নিয়ে লোয়াং নদীর তীরবর্তী প্রাচীন স্থাপত্য ও নিদর্শন ঘুরিয়ে দেখানো হয়। শেষে মেয়রের কার্যালয়ে রানীর সম্মানে এক চা-চক্র অনুষ্ঠিত হয়। চা চক্রে স্থান পেয়েছে ফ্রান্সের বিখ্যাত হরেক রকমের চকোলেট।

চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন:
এরপরে সন্ধ্যা ৬টায় রোল্যান্ড ড্যাগনাউড হলে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রপ্রদর্শনীর মূল আয়োজন। উপস্থিত ছিলেন রাণী ইয়ান ইয়ান, স্থানীয় মেয়র ডিক্রান জাকেওসিয়ান ও ফ্রান্সে বসবাসরত জুম্ম কমিউনিটির সদস্যরা।

উদ্বোধন শেষে শিল্পী তুফান চাকমা তাঁর প্রতিটি শিল্পকর্মের অন্তর্নিহিত গল্প, রঙের ব্যবহার ও প্রতীকী ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন সংগঠনের উপদেষ্টা সমাপ্তি চাকমা।

এই প্রদর্শনী কেবল একটি ভিজ্যুয়াল আয়োজন ছিল না বরং জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয়ের এক শক্তিশালী দলিল।

অতিথি সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা:
পরবর্তী পর্বে, রানী ইয়ান ইয়ান মেয়রকে জুম্মদের ঐতিহ্যবাহী হাধি উত্তরিয় পড়িয়ে সংবর্ধনা জানান। অতিথি বক্তাদের মধ্যে ছিলেন রানী ইয়ান ইয়ান, মেয়র ডিক্রান জাকেওসিয়ান, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি রেমি ফ্লেগিয়ের ও দোভাষী হিসেবে সমাপ্তি চাকমা।

তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে জুম্মদের মানবাধিকার, ঐতিহ্যগত সংগ্রাম এবং শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে অধিকারের দাবি।

পরিশেষে, জুম্ম ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন শিশু শিল্পী আরিয়া চাকমা, শায়রি ও উলা মারমা প্রমূখ।

প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন রবিবার ছিল মিলন সমাবেশ ও মুক্ত আলোচনা:
রবিবার সকাল ১১টায়, একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় জুম্ম জনগণের মিলনমেলা ও মুক্ত আলোচনা। উপস্থিত ছিলেন “জুম্মদের কন্ঠস্বর” এর মুখপাত্র বাপ্পি চাকমা, সভাপতি রেমি ফ্লেগিয়ের, সেক্রেটারি পার্থ দেওয়ান, শ্রদ্ধেয় রানী ইয়ান ইয়ান ও শিল্পী তুফান চাকমা।

আলোচনায় উঠে আসে সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অধিকার আদায়ের কৌশল,
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জুম্মদের অধিকারের প্রচার, জাতিসংঘ আদিবাসী ফোরামে অধিক গুরুত্ব আনার পরিকল্পনা ইত্যাদি। এছাড়াও তুফান চাকমার শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ ও জুম্ম চেতনাকে জাগ্রত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আলোচক বৃন্দ। সাধারণ সম্পাদক পার্থ দেওয়ানের বক্তব্যে রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতর থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও দাবি তুলে ধরার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশা ব্যক্ত করেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাপ্তি:
দুপুরের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী সদস্য রিগ্যান চাকমা। নৃত্য পরিবেশন করেন শায়রি, উলা মারমা, শেলি চাকমা, এবং যৌথ নৃত্যে অংশ নেন তমেলি ত্রিপুরা ও তারই কন্যা খাতিমা ত্রিপুরা। কবিতা আবৃত্তি করেন আর্টিস্ট মৃদুলী চাকমা।

অনুষ্ঠানের সমাপ্তিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে রানী ইয়ান ইয়ানকে স্মারক মেমো ও তুফান চাকমার আঁকা একটি ইউনিক শিল্পকর্ম উপহার দেওয়া হয়। শেষে সবাই একটি সম্মিলিত গ্রুপ ফটো তোলেন । এই চিত্র যেন প্রতিফলন করে একটি ঐতিহাসিক ক্ষণের।

এই দুইদিনের আয়োজন ছিল শুধুমাত্র শিল্পের প্রদর্শনী নয়; বরং এটি হয়ে ওঠে জুম্ম জনগণের ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও আশা-ভরসার এক উজ্জ্বল প্রতিফলন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

More News Of This Category