প্যারিসে নারীর প্রতি সম্মান ও সমঅধিকারের আহবান জানিয়ে সাফ’র ‘নারীকথা’
নারীর প্রতি সম্মান-সমঅধিকার ও নারীর অবদানকে স্বীকৃতির আহবান জানিয়ে শিল্প-সংস্কৃতির তীর্থভূমি প্যারিসে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
শনিবার বিকালে (৮ মার্চ) দুপুর ১২ টায় সলিডারিতে আজি ফ্রান্স (সাফ)’র উদ্যোগে প্যারিসের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বর সংলগ্ন BOURSE du travail মিলনায়তনে এ ‘নারী কথা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান, ফরাসি প্রশাসনিক বিভাগ অফি’র অডিট অফিসার লিন্দা মেরী সরকার, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নুপুর হক, খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী মৌসুমী চক্রবর্তী, কবি ও আবৃত্তিশিল্পী মেরী হাওলাদার, জলি অপটিক’র ডিরেক্টর ঋতু বড়ুয়া, প্যারিসের যুব কাউন্সিলর ও সাফ’র প্রেসিডেন্ট লেখক নয়ন এনকে।
সাফ’র কমিউনিকেশন বিষয়ক সম্পাদক তাওহিদ আহমেদ, তাসনিয়া আনজুম ও সোমা দেবনাথের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বাংলায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সাফ’র সাধারণ সম্পাদক মামুন হাসান ও ফরাসি ভাষায় জোবাইদা শাম্মী।
অনুষ্ঠানে শুরুতেই পৃথিবীর সকল নারীদের উৎসর্গ করে কবি ও লেখক লোকমান আহম্মদ আপন তার স্বরচিত একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
সৃষ্টির সূচনায় নারী, সৃষ্টির বিকাশেও নারী। মহৎ এই শক্তিকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করার আহবান জানিয়ে সভায় আলোচকের বক্তব্যে হাসনাত জাহান বলেন, ‘সমাজ ও জাতির উন্নয়নে নারীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সকল দ্বিধা ও জড়তাকে কাটিয়ে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা নারী জাগরণে সবাইকে আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে; তবেই দেশ ও জাতি সমৃদ্ধশালী হবে।’
নারী দিবস উদযাপনের মাঝে যেন আটকে না থাকে উল্লেখ করে- আলোচক লিন্দা মেরী সরকার বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বার্তা ঘর থেকে ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে শুরু করতে হবে। আমাদের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো হয়তো পরবর্তীতে একটা বড় মহীরূহে পরিণত হবে এবং আমরা একটা সাফল্য দেখতে পারবো। কিন্তু আমরা শেকড়েই যদি সচেতন না থাকি, অসচেতনভাবে আমাদের সন্তানদের আমরা বড় করি- তার ফল খুব একটা ভালো হয় না। তাই, আমরা যেন আমাদের সন্তানদের মাঝে লিঙ্গ বৈষম্য ঢুকিয়ে না দিয়ে তাদের মননশীল চিন্তার বিকাশে সমানভাবে গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, ‘নারী দিবসের মূল কথা হচ্ছে— আমরা একসাথে হাঁটবো, পাশাপাশি হাঁটবো; কেউ পেছনে কেউ সামনে না। বাহিরে যতই আমরা বলি না কেন- নারীদের সম্মান করবেন, নির্যাতন-নিপীড়ন, অসম্মান এইসেই করবেন না। আমরা ঘর থেকে থেকে যদি শুরু না করি তাহলে কিন্তু বাহিরে বক্তৃতা দিয়ে কোন লাভ নেই। এই দিবস পালন কোন লাভ নেই, এতে কোন উন্নতি হবে না।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নূপুর হক বলেন, ‘আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন নিয়ে কেন কথা বলা দরকার। কারণ আমাদের নারীরা ঘরে-বাহিরে নানানক্ষেত্রে বঞ্চিত। আমরা আমাদের মনস্তাত্ত্বিক জগতে সেট করি নিয়েছি যে নারীরা আসলে পারবে না, পারে না। এই পারে না, পারবে না এই জায়গাগুলো যদি আমরা মূল্যায়ন করি যে— নারীরাও একজন মানুষ, তার অবদান আমাদের জীবনে, সমাজ-পরিবার এবং রাষ্ট্রে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। তাহলে এই অসমতা আমাদের আর থাকবে না। তাই নারীদের উন্নয়নে নারীর প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা সাহায্য-সহযোগিতা করবো এটিই হোক নারী দিবসের স্লোগান।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি— নারী বাহিরে গেলে, চাকুরী করলে খারাপ হয়ে যায়। অথচ নারী চাকুরী করলে স্বাবলম্বী হলে তার উপার্জিত বেশিরভাগ অর্থ স্বামী-সংসার সন্তানদের জন্য ব্যায় করে থাকেন। পুরুষের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ না হলে একটি পরিবার যেমনি এগিয়ে যেতে পারে না, তেমনি একটি সমাজ-জাতি কিংবা দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তাই নারীদের এগিয়ে নিতে ঘর থেকে তাদেরকে সমর্থন দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে নারীদের সংগ্রাম, সফলতার গল্প ও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের কথা তুলে ধরে নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, অনুভূতি প্রকাশ করেন অতিথিবৃন্দ।
এছাড়া নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা পৃথিবীব্যাপি একটি বিরাজমান সমস্যা উল্লেখ করে ন্যক্কারজনক এসব ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ ও চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে আগামীর বিশ্ব গঠনে নারী নির্যাতন, নিপীড়ন ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবাইকে সরব ও সোচ্চার থাকার আহবান জানাম অতিথিবৃন্দ।
আলোচনা সভা পরবর্তী পর্বে সাফ কর্তৃক ফরাসি ভাষা শিক্ষা কোর্স A-1 এর সনদ প্রদান, কুইজ প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, বাণিজ্যমেলার স্টল রেজিষ্ট্রেশন ও ইফতার বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠানে ফ্রান্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি ফরাসিসহ বিভিন্ন দেশের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply