বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান ও রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কটূক্তি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তান ও ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কটূক্তি করার প্রতিবাদে গত ২রা জানুয়ারি সোমবার রাজধানী প্যারিসের স্থানীয় লা-কর্ণোভের ফ্রান্স-বাংলা স্কুলের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্টিত হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্সের সভাপতি ও ASCIBF- ফ্রেঞ্চ বাংলা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম মিয়া জামিল ( মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং 01500001213)। তিনি তার লিখিত বক্তব্যের শুরুতে গভীর ভাবে স্মরণ করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৭৫ সালে ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শাহাদত বরণকারী তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লক্ষ শহীদ, ২ লক্ষ মা বোনদের, যাদের রক্ত এবং ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এই স্বাধীনতা। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে নিজের পরিচয় ও রনাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য গেরিলা ও উচ্চতর ট্রেনিং শেষ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে রনাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাহার ট্রেনিং কালিন ভারতীয় যোদ্ধা নং ছিল.FF 9937 এবং ভারতীয় কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন ইগনাছ কাচাপ। তিনি ভারতীয় সেনাদের সাথে প্রথমে দিনাজপুর এবং পরে রংপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। সর্বশেষ বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ সমাপ্ত করেন। তিনি ৬ ও ৭ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্স কর্তৃক আয়োজিত গত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা প্রধান অতিথি এবং দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান ও প্রথম সচিব মোঃ ওয়ালিদ বিন কাশেম সহ স্থানীয় কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের পíরদিন ফ্রান্স প্রবাসী ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে যে, কূরুচি পূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা এবং ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম সারির এক টেলিভিশনের ফ্রান্স প্রতিনিধি তার ফেসবুকে লেখেন, ” কোন মুক্তিযোদ্ধা কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে পারে না, আপনি যে প্যারিসের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এতদিন শুনেছিলাম আজকে তার প্রমাণ পেলাম। আপনার পাছায় লাথি মারি”। প্যারিসে বসবাসরত ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা উক্ত সাংবাদিকের পোষ্ট কে শেয়ার করে সাংবাদিক কে উদ্দেশ্য করে লেখেন কে এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ফ্রান্স প্রবাসীরা জানতে চায়। এমনকি উক্ত ফেসবুক পোষ্ট কে ‘প্যারিস বাংলা খবর’ নামক আইডি থেকে শেয়ার করে লেখেন, এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন জামিল মিয়া। কিন্তু ফ্রান্স প্রবাসী ক্ষমতাসীন দলের ঐ নেতা এবং সাংবাদিক দুইজনের কেউই বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম মিয়া জামিল কে নিয়ে এই ধরনের কূরুচি পূর্ণ মন্তব্যের কোন প্রতিবাদ করেননি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ জামিরুল ইসলাম মিয়া জামিল বলেন, যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের ঐ নেতা এবং সাংবাদিক এই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কোন প্রতিবাদ করেননি সেক্ষেত্রে প্রতিয়মাণ হয় যে, এসবের পিছনে তাদের ইন্ধন রয়েছে। এমনকি গত ১৯ শে ডিসেম্বর ফ্রান্স প্রবাসী আশরাফুল ইসলাম নামে একজন তার ফেসবুকে লেখেন, “কোন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তান কোন রাজাকার বা তাদের পরিবারের সদস্যের কাছে নিজের প্যান্ট খুলে উপুর হয়ে শুয়ে থাকার কথা না, হোক সে মন্ত্রী বা জেনারেল বা এমবাসেডর বা এমপি” তিনি আশরাফুল ইসলামের এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ পোষ্টের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং বলেন, যদি তারা ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন এবং দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিচার দাবি করবেন। তিনি আরো বলেন,গত বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বানচাল করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুনির হোসেনের একটি ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় যারা ভাইরাল করে তাকে দেশদ্রোহী ও জামায়াত বিএনপি বানানোর হীন প্রচেষ্টা করেছে তাদের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। আমার জানামতে মোহাম্মদ মুনির হোসেন একজন প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তিনি কখনো জামায়াত ও রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তিনি স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।
অন্যান্যের মধ্যে আরো প্রতিবাদ ও নিন্দা করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন এবং ভার্চুয়ালী অংশগ্রহণ করে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, জার্মানি থেকে সর্ব ইউরোপীয়ান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুর রহমান খসরু , সুইজারল্যান্ড থেকে সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সোহরাব হোসেন(সহ যোদ্ধা জামিল মিয়ার)ও “মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের” সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোহাম্মদ মুনির হোসেন, রাশেদুল হাসান ও সাহেদ বিন সুলতান। মুনির হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান এবং রাষ্ট্রদূত কে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় কূরুচি পূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তারা দেশদ্রোহী, স্বাধীনতার শত্রু, জাতির শত্র, বাংলাদেশের শত্রু। তিনি বলেন, যারা সোস্যাল মিডিয়ায় একটি গ্রুপ ছবি থেকে অন্যান্যদের ছবি কাট করে শুধু আমার ছবি দিয়ে আমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী এবং জামায়াত, বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত বলে দূতাবাস কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন তারা নিজেরাই নিজেদের অতীত কুকর্ম ঢাকতে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন তাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেন। তিনি তাদের কে হুঁশিয়ার করে বলেন, যারা পিনাকী ভট্টাচার্যের সাথে ছবি সম্পৃক্ত করে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন তারা নিজেরাই বিদেশে বসে বিএনপি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ ফ্রান্সের কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও ফ্রান্স -বাংলা স্কুলের পরিচালক মিসেস ফাতেমা খাতুন, কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও ফ্রান্স আওয়ামী লীগ নেতা জয়নুল আবেদীন, সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম রনি, দপ্তর সম্পাদক অরুন্দ বড়ুয়া(রবিন), ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ইয়াছিন হক, সাংস্কৃতিক ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মতিউর রহমান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নুরুন নাহার নিপা, সম্মানিত সদস্য সরদার নাজমুল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান।
Leave a Reply