—
উৎসবমুখর ও বর্ণিল আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্যারিসের নিকটবর্তী La Courneuve এর Salle Phillipe Roux এ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘বাংলা বর্ষবরণ উৎসব-১৪২৯’’ এবং ঈদ পুনর্মিলনী।
প্রবাসী কর্মময় একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসী বাঙ্গালিরা সারাদিন ব্যাপী আনন্দ উৎসবে মেতেছিল অন্যরকম এক মিলন মেলায়। বাংলার সবুজ মাঠ পেরিয়ে বিশ্ব প্রান্তরে সূর্যের হাসি তেমন দেখা না মিললেও প্রবাসীদের বৈশাখের রঙ, ভালোবাসার রঙ, আড্ডার রঙ, লোকজ ভাবনা, বাংলার ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় একে অপরের সান্নিধ্যে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বিনিময়ের মাধ্যমে হৃদয়-মন ভরে উঠেছিল জীবনের আনন্দ জয়গানে। ফ্রান্সে গড়ে উঠা একমাত্র ASCIBF- ফ্রেঞ্চ বাংলা স্কুলের
শিশু-কিশোর আর নারী-পুরুষের পদভারে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল স্থানীয় সিটি করপোরেশন( মেরীর) মিলনায়তন।বীর মুক্তিযোদ্ধা জামিরুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে ও সুমা দাসের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন Monsieur Stephane Troussel , (Président du conseil départemental de la Seine Saint Denis) বিশেষ অতিথি ছিলেন মেরীর প্রতিনিধিবৃন্দ M Oumarou Doucoure, Mme Marine Bouvet, M Rafi, M Amin Saha সহ আরো অনেকে।
প্রজন্মের কাছে আবহমান বাংলার কৃষ্টি-ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় সত্ত্বাকে তুলে ধরাই ছিল বাংলা বর্ষবরণ উৎসবের মূল লক্ষ্য।
অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের অভিভাবকদের পরনে ছিল রং বেরংয়ের বাহারি শাড়ি ও পাঞ্জাবি। মূল আকর্ষণ ছিল ছোট ছোট শিশু কিশোরদের হাতে বৈশাখী সাজে রঙবেরঙের প্লাকার্ড হাতে বৈশাখী গান “এসো হে বৈশাখ” পরিবেশনা।
সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা, স্কুলের অভিভাবকবৃন্দ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তাদের অনবদ্য সঙ্গীত পরিবেশনায় ফুটে উঠে বাংলার রূপ, প্রকৃতি, ভালোবাসা ও নির্মল আনন্দ। পদ্মা-যমুনা মিলনের মতই প্রবাসী বাঙ্গালিদের পাশাপাশি বিদেশিরাও এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে উপোভোগ করেন । নানা রকমের ভর্তা ও পান্তা ইলিশ দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা ছিল । আনন্দের আবহে দুপুর থেকে রাত অবধি বাঙ্গালির চিরাচরিত আড্ডা আর লোকে লোকারণ্যে মুখরিত শিশু কিশোরদের গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নাচ ও উপস্থাপনায় কোথাও যেন ঘটেনি ছন্দপতন।
আয়োজক সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জামিরুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমাদের রয়েছে সুন্দর একটি সংস্কৃতি, যে বলয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি, সেই ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নবপ্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই। সারা বিশ্ব আনন্দময় হয়ে উঠুক বছরের প্রথম দিনে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
উপস্থিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন বলেন, খুবই ভালো লাগছে এখানে আসতে পেরে। আমাদের বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে বিদেশিদের উপস্থিতি দেখে আরো বেশি ভালো লাগছে। নতুন বছর সবার জীবনে আনন্দ আর অনাবিল শান্তি বয়ে আনবে । ASCIBF-ফ্রেঞ্চ বাংলা স্কুলের পরিচালক ফাতেমা খাতুন স্কুলের পক্ষ থেকে সকল অতিথিদের শুভেচ্ছা ও বৈশাখী ঐতিহ্য পান্তা ইলিশ ও নানা রকমের ভর্তা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান এবং পয়লা বৈশাখের এই আনন্দ সারা বছর বাঙ্গালিদের মধ্যে বিরাজমান থাকবে এমনটাই উনার প্রত্যাশা।
প্যারিসের সংগীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুমা দাস বলেন, আমরা বাংলাদেশের রমনার সেই বটমূলের বৈশাখ কে খুব মিস করছি। তবুও দীর্ঘ দুই বছর পর পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে বৈশাখের আনন্দে শামিল হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মঙ্গলময় হয়ে উঠুক পুরো পৃথিবী।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মোহাম্মদ মুনির হোসেন বলেন প্রবাস জীবনে বাংলার ঐতিহ্যকে হৃদয়ে লালন করে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে প্রবাসে বসবাসরত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি একঘেয়েমী জীবনে প্রবাসী সকল ভাইবোনদের পরস্পরের সাথে নতুন বছরের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
দূর প্রবাসে বাঙ্গালি জীবনে বাঙ্গালি সংস্কৃতির এ উৎসব যেন এক মহামিলন।
কর্মজীবনের পাশাপাশি সম্প্রীতির বন্ধনে এমনি করে বারবার এই মহামিলনে জেগে উঠবে নতুন প্রজন্ম, হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে লাল সবুজ আর মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হয়ে উঠবে আরও সুন্দর এমনটাই প্রত্যাশা প্যারিসের বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ, ASCIBF- ফ্রেঞ্চ বাংলা স্কুলের সকল অভিভাবকবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম, সংবাদকর্মী, স্কুলের সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রী বৃন্দ এবং স্থানীয় ভিন্ন ভাষাভাষীর এলাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানকে আর ও প্রাণবন্ত করেছিল। সমাপনী বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা জামিরুল ইসলাম মিয়া অনুষ্ঠান সফল করার ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করেছেন সকলকে ধন্যবাদ দেন ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
Leave a Reply