প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবিতে প্যারিসে বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে বিশাল সমাবেশ
ও প্রধান উপদেষ্ঠা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান
অতীতের কোনো সরকারই প্রবাসীদের ভোটাধিকারের দাবি পূরণে সত্যিকার অর্থে কেনো আন্তরিকতা দেখায়নি। বিগত ৫৪ বছর শুধু মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ভোটাধিকার তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার সমাবেশে উপরোক্ত কথা গুলো বলেন বক্তারা।
প্যারিসের বাংলাদেশ দুতাবাসের সামনে বাংলাদেশী নাগরিক পরিষদ, ফ্রান্স আয়োজিত সমাবেসে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি জনাব আবুল খায়ের লস্বর। সংগঠনের সেক্রেটারী ইমরান আহমদের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জনাব মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ভূঁইয়া, আইসা পরিচালক ওবায়দুল্লাহ কয়েছ, অনলাইন একটিভিস্ট মীর জাহান, সাংবাদিক নেতা ও ইউরো বার্তা সম্পাদক মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম, বরিশাল কমিউনিটি সেক্রেটারী মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক নেতা ও এটিন বাংলা রিপোর্টার রাবেয়া আক্তার সুবর্না , সাংবাদিক নেতা নয়ন মামুন, লন্ডন ইউনিভার্সিটি আইন বিভাগের ছাত্রী ও ব্রান্ড এম্বেসেডর ইডনি মুসলিম উদ্দিন, প্যারিস বাংলা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারী মোঃ আব্দুল মালিক হিমু প্যারিস বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এনায়েত হুসেন সুহেল, কার্যনির্বাহী সদস্য ফারিয়া মাহবুবা আলম, বন্ধন পরিচালক শিউলি গিয়াস, পরিষদ ট্রেজারার আরিফুর রহমান, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, প্রবাসের আলো সম্পাদক ওমর ফারুক,এ ছাড়া ফরাসি ভাষায় বক্তব্য রাখেন শুভেচ্ছা শেখ ও দেশত্ববোধক গান পরিবেশন করে প্যারিস শিল্পীর গোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দ।
বক্তারা আরো বলেন ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে বিদেশে বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের জনগণের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য রাস্তায় নেমেছিল, প্রায়শই যথেষ্ট ব্যক্তিগত ঝুঁকি নিয়ে। তৎকালীন ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কর্তৃক আরোপিত ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের প্রতিক্রিয়ায় রেমিট্যান্স বন্ধ আন্দোলন সংগঠিত করে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহকে ইন্ধন জোগায়। ফ্রান্সে, বাংলাদেশি সম্প্রদায় প্লাস দো লা বাস্তিল, প্লাস দো লা নেশন এবং প্লাস দো লা রিপাবলিক-এ প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সর্বশেষ ঐতিহাসিক প্লাস দো লা রিপাবলিক একটি প্রতীকী বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছিল, যেখানে ৫,০০০ এরও বেশি প্রবাসী এই আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। তারা বাংলাদেশে তাদের আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবদেরও অটল সমর্থন এবং উৎসাহ প্রদান করেছিলেন যারা পরিবর্তনের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
যারা নিপীড়ন ও অবিচার থেকে মুক্তির লক্ষ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এবং যারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ত্যাগকে চির কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছেন বক্তারা। তাদের বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাকে শ্রদ্ধা জানান।
প্রবাসীরা মনে করেন এমন একটি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা যা কেবল সমৃদ্ধই নয় বরং আইনের শাসনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমতা সু শাসন উপভোগ করবে জনগণ ।
বক্তরা বলেন এবার যদি প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আর কখনো হয়তো করা হবে না। সুতরাং এমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীদেরকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। তাদের ন্যায্য ভোটাধিকার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই দিতে হবে।’
প্রবাসী বা্ংলাদেশীরা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান তৎপরতা দেখতে চায় । প্রবাসীদের ভোটার তালিকা বাংলাদেশের সাথে একযোগে ভোট প্রদান সুযোগ করে দিতে হবে।
সমাবেশ শেষে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বাংলাদেশী নাগরিক পরিষদ, ফ্রান্সের সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল লিখিত স্মরকলিপি পশে করেন।
স্মারকলিপির মৌলিক বিষয় নিম্নে তুলে ধরা হলো।
• ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, প্রবাসীরা দেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমতকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল;
• তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রচেষ্টা এবং নিরাপদে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিদের সমর্থনে উল্লেখযোগ্য আর্থিক অবদান রেখেছিল;
• তারা রেমিট্যান্স এবং আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে;
• ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও, তারা তাদের স্বদেশীদের অটল সমর্থন প্রদান করে তাদের মাতৃভূমির সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রেখেছে;
• তারা সর্বদা বাংলাদেশের সংকট এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদারভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে;
• তারা আবেগের সাথে তাদের সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রচার করেছে।
• আমরা আপনার বিবেচনার জন্য সম্মানের সাথে নিম্নলিখিত উপস্থাপনাগুলি করছি:
• আমরা গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশগ্রহণের স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনা সত্ত্বেও, এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
• এই অধিকার প্রদানের বিরুদ্ধে কখনও কোনও যুক্তিসঙ্গত যুক্তি দেওয়া হয়নি; বিপরীতে, পরবর্তী সরকারগুলি বারবার অংশগ্রহণ সক্ষম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
• এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের অনুপস্থিতি প্রবাসীদের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার অনুভূতিকে আরও গভীর করেছে।
• এই দাবির পক্ষে এখন জোরালো গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক কণ্ঠস্বরে প্রতিফলিত হয়েছে।
• আমরা বর্তমান প্রশাসনকে এই ঐতিহাসিক সুযোগ কাজে লাগানোর এবং মৌলিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনুরোধ করছি।
• আমরা স্বীকার করি যে লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, কিন্তু আমরা আমাদের বিশ্বাসে অটল রয়েছি যে সেগুলি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, এবং এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
• এই লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য, আমরা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি প্রস্তাব করছি:
• আপনার প্রশাসন, আমাদের দাবির বৈধতা পুনর্ব্যক্ত করে, এমন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা প্রবাসী ভোটদানকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
• প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে, সরকারের প্রতিনিধি, আমাদের সংগঠন, প্রবাসী প্রতিনিধি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি কার্যকরী দল গঠন করা।
• এই কার্যকরী দলের দায়িত্ব হবে বাস্তবায়নের সাথে সম্পর্কিত বাস্তব সমস্যাগুলি অনুসন্ধান করা – যার মধ্যে সম্পদ, আর্থিক এবং অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত – এবং কার্যকর সমাধান প্রস্তাব করা।
• অবিলম্বে প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাসে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করুন যাকে প্রবাসী সম্প্রদায় এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে যোগাযোগকারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
• আমাদের সংস্থা এই প্রস্তাবগুলি এগিয়ে নিতে বিলম্ব না করে প্রস্তাবিত কর্মী দল এবং যোগাযোগ কর্মকর্তার সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যে অগ্রগতি হয়েছে তা আমরা আরও লক্ষ্য করছি। এটি প্রমাণ করে যে, যেখানে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি থাকে, সেখানে সাহসী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হতে পারে।
আমরা আরও উল্লেখ করছি যে প্রতিবেশী ভারত, তুরস্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ আরও অনেক দেশ বিদেশে তাদের নাগরিকদের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশও এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
মাননীয়, আপনার সরকার বাংলাদেশের জনগণের, যার মধ্যে নির্দলীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ও রয়েছে, সমর্থিত একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল। আমরা বিশ্বাস করি এই মুহূর্তটি ইতিহাস তৈরি করার এবং প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগগুলির একটি সমাধানের সেরা সুযোগ। ভোটাধিকার প্রদানের ফলে বিদেশে বসবাসকারী ১ কোটি ৫০ লক্ষ বাংলাদেশিকে দেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার ক্ষমতাও দেওয়া হবে।
একজন লিয়াজোঁ অফিসার নিয়োগ এবং এই মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরির জন্য জন্য আহ্বান জানান।
Leave a Reply