বাংলা ভাষা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বাংলা ভাষা অর্জন করতে হয়েছে তাজা প্রাণের বিনিময়ে। এটিই পৃথিবীতে একমাত্র ভাষা যা অর্জনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। ভাষা শহীদদের স্মরণে ও তাদের প্রতি সম্মান জানাতে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে যাত্রা শুরু হয় । সেই থেকে আজও পযর্ন্ত বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার । তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্যারিসের বুকে উদ্বোধন করা হলো স্থায়ী শহীদ মিনার ।
রোববার যৌথভাবে শহীদ মিনারটির উদ্বোধন করেন সেইন্ট ডেনিনসের মেয়র মাতিউ হ্যানোতা, অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব ও শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা কাজী এনায়েত উল্লাহ এবং সিকানো বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরুফ। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের আদলে নির্মিত এই শহীদ মিনার প্যারিসের বিখ্যাত সেন্ট ডেনিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশে অবস্থিত।
এই শহীদ নির্মাণের ফলে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। ফলে আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারিতে স্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে, জুখেস চত্তর সহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাত ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্যারিসে স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরিতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য মেয়রকে টেলিফোনে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। এর পরেই প্রতিমন্ত্রীর বাণী ফ্রেঞ্চ ও বাংলা ভাষায় পাঠ করা হয় ।শহীদ মিনার বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের (আয়েবা) মহাসচিব কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এই বৃহত্তর প্যারিসের বুকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলা ভাষার শহীদ মিনার। বাংলা ভাষা এখন বিশ্বের পঞ্চম বহুল ব্যবহৃত ভাষা। আর এই ভাষা ইতিহাস এখান থেকেই পরবর্তী প্রজন্মসহ বিদেশিরা জানতে পারবে। এই স্থায়ী শহীদ মিনারটি বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে অন্য উচ্চতায়।’
শহীদ মিনারের মূল উদ্যোক্তা সিকানো বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সরুফ সদিওল বলেন, ‘যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বৃহত্তর এই প্যারিস সিটিতে ভাষা শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
উদ্বোধনী এই বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসির সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি আবুল কাশেম, বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর উত্তম বড়ুয়া, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল জমাদার, ইতালি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রব মিন্টু, একুশে উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক সুব্রত ভট্টাচার্য শুভ, ফ্রান্স বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাত্তার আলীর সুমন শাহ আলম, বাংলাদেশ বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সালেহ আহমদ চৌধুরী, আশরাফুল ইসলাম, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অপু আলম, এমদাদুল হক স্বপন, ফ্রান্স-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দেবেশ বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক হিমু, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ফ্রান্সের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক ইমরান মাহমুদ, লুতফুর রহমান বাবু, বিসিএফ সভাপতি এম ডি নূর, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্ট সলিউশন সংস্থা পরিচালক উবায়েদ উল্লাহ কয়েসসহ ফ্রান্সের বিভিন্ন বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের নেতারা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত কমিউনিটি নেতারা, গণমাধ্যমকর্মী ও বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তি।পরে ফ্রান্সের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Leave a Reply